কাতালোনিয়ার ভবিষ্যৎ কোন দিকে?


স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়া দেশটি থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর উচ্ছ্বাস আর উদ্যাপনে ভাসে বার্সেলোনাবাসী। গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় পাওয়ার প্রায় এক মাস পর শুক্রবার স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরপরই কাতালোনিয়ার পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা ও সেখানে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে স্পেন। উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে কাতালোনিয়ার ভবিষ্যৎ কোন দিকে—এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।  কাতালান নেতাদের কী হবে? স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয় কাতালান নেতা কার্লোস পুজেমনের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়াসহ কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক সরকারকে বিলুপ্ত করেছেন। তিনি কাতালোনিয়ায় আগামী ২১ ডিসেম্বর আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন। বলেছেন, ওই নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কাতালানের প্রশাসনিক ক্ষমতার দায়িত্ব পালন করবেন কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীরা। স্পেনের প্রসিকিউটরের দপ্তর জানিয়েছে, কাতালান নেতা কার্লোস পুজেমনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ আনা হবে। অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে কি না, তার সিদ্ধান্ত আদালতই নেবেন। 

স্পেনের আইন অনুযায়ী, বিদ্রোহের অপরাধে কোনো ব্যক্তির ৩০ বছর পর্যন্ত সাজা হওয়ার বিধান আছে। এ ছাড়া স্পেনে সাংবিধানিক আদালত কাতালান পার্লামেন্টের ভোটাভুটি নিয়েও পর্যালোচনা করা শুরু করেছেন। এর আগে কাতালোনিয়ার গণভোটকে বাতিল করেছিলেন স্পেনের এই আদালত।  কেন্দ্রের শাসন কী করে জারি করবে স্পেন? ধারণা করা যাচ্ছে, কাতালোনিয়ার ওপর সরাসরি কেন্দ্রের শাসন জারি করতে স্পেনকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হবে। কারণ হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাতালানবাসী দীর্ঘদিন সুবিধা ভোগ করে এসেছে। তাই তারা এসব বিষয়ে অতিমাত্রায় রক্ষণশীল। স্পেন বলেছে যে তারা কোনো গ্রেপ্তার কিংবা ধরপাকড় করতে চায় না। কিন্তু কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা তাঁদের অফিস ত্যাগ করতে না চাইলে, আসলেই তা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যায়। কাতালোনিয়ার পুলিশ বাহিনী মোসোস দ্যস্কোয়াদ্রা স্পেন থেকে স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা কেন্দ্রের আদেশ মানবেন না। কাতালোনিয়ার মন্ত্রী ও সাংসদদের অপসারণে তাঁরা কোনো ধরনের সহযোগিতা করবেন না। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী রাহয় বলেছেন, মোসোস প্রধানকে বরখাস্ত করা হবে। মোসোস পুলিশ কর্মকর্তাদের স্থলে কেন্দ্রের পুলিশ নিয়োগ করা হবে। প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার প্রশ্নে ১ অক্টোবরের গণভোট বানচালে স্পেনের কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। এদিকে কাতালোনিয়ার বিচ্ছিন্নতাকামীরা অসহযোগের আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, কেন্দ্রের সব পদক্ষেপে ব্যাপক মাত্রায় অসহযোগিতা করা হবে।

কাতালানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সরকারি কর্মকর্তাদের স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের আদেশ না মানতে অনুরোধ করছে। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ’ গড়ার আহ্বান। কিন্তু এ ধরনের আহ্বানে কতটুকু সাড়া মিলবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ, কাতালানবাসীর সবাই স্পেন থেকে বের হতে চায়নি। গণভোট নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল কাতালানবাসী।  এই সংকট কাতালোনিয়ার অর্থনীতিকে কীভাবে প্রভাবিত করবে? স্পেনের অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে কাতালোনিয়ার আর্থিক বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছেন। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, মাদ্রিদ কাতালোনিয়ার আর্থিক বিষয়ের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেবে। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যার অবশ্যই অর্থনৈতিক প্রভাব থাকবে। প্রায় ১ হাজার ৭০০টি কোম্পানি তাদের সদর দপ্তর কাতালোনিয়ার বাইরে নিয়ে গেছে। প্রসঙ্গত, স্পেনের জাতীয় রপ্তানির প্রায় ২৫ শতাংশ কাতালোনিয়া থেকে আসে। ওই গণভোটের পর স্পেনের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম পড়ে গেছে, বিশেষ করে কাতালান ব্যাংকগুলোর। এ ছাড়া বার্সেলোনাসহ গোটা কাতালান অঞ্চলই স্পেনের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।  বিশ্ব কী ভাবছে? ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, কাতালোনিয়ার পার্লামেন্টের স্বাধীনতার ঘোষণায় কোনো কিছু পরিবর্তন হয়নি। ইইউ শুধু মাদ্রিদের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কাজ করবে। ইইউ শুরু থেকেই স্পেনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রেখেছে। কাতালোনিয়া নিয়ে সৃষ্ট সংকটকে স্পেনের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেও জোটটি আখ্যা দিয়েছিল। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রে মাদ্রিদের মিত্ররা মারিয়ানো রাহয়ের পক্ষেই আছেন। টুইটারে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লেস মিশেল বলেন, সংলাপের মাধ্যমেই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সম্ভব। টুইটারে পোস্ট করা বিবৃতির মাধ্যমে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মুখপাত্র স্টেফেন সেইবার্ট বলেন, ‘জার্মান সরকার এ ধরনের স্বাধীনতার ঘোষণার স্বীকৃতি দেয় না।’ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের দপ্তর বলেছে, কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক পার্লামেন্টের স্বাধীনতার ঘোষণা ব্রিটেন স্বীকৃতি দিচ্ছে না এবং দেবেও না। কারণ, যে গণভোটকে স্পেনের আদালত অবৈধ বলেছেন, তার ভিত্তিতে তা হয়েছে।

 কিন্তু স্পেনের সমালোচনা করে স্কটিশ সরকার বলেছে, কাতালোনিয়ার আলোচনার প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে মাদ্রিদের সরাসরি শাসন জারি করা কোনো সমাধান হতে পারে না। প্রসঙ্গত, স্কটিশ সরকারের নেতৃত্বে রয়েছে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি, যেটি যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীন হতে প্রচারণা চালিয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘কাতালোনিয়া স্পেনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্পেনকে একীভূত ও শক্তিশালী রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারের সাংবিধানিক পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে।’

No comments

Powered by Blogger.